ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই দশক ক্যাম্পাসে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গোপনে তাঁরা ক্যাম্পাস ঘিরেই গড়ে তুলেছিলেন আস্তানা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংগঠনের 'সদস্য' রয়েছেন ১৫১ জন। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানের মুখে গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। সমর্থক-কর্মী-সাথী_এই তিনটি ধাপ পেরিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে সদস্য। পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাই তাঁদের আখ্যা দিয়েছেন 'পাক্কা' শিবির।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এ সদস্য সংখ্যা দেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রীতিমতো বিস্মিত। তাঁরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে শিবিরের শুধু সদস্যই যদি এত হয় তাহলে তাঁদের মোট জনবল কত তার হিসাব মেলানো কঠিন।
সম্প্রতি রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সহিংস তৎপরতার পর গত শুক্রবার শাহবাগে একটি মেসে অভিযান চালিয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনিসুর রহমানের কক্ষ থেকে একটি তালিকা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গ্রেপ্তার কয়েকজন শিবির নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের 'সদস্য'দের তালিকা।
উদ্ধার করা তালিকায় কোন সদস্য কোন তারিখে শপথ নিয়েছেন, কিংবা কার রক্তের গ্রুপ কী এবং কে কোন এলাকার কোন কোচিং সেন্টারের দায়িত্বে আছেন, তারও বর্ণনা আছে। এ ছাড়া ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নিহত তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির নামে ক্যাম্পাসে একটি এলাকাকে 'মালেক জোন' নাম দিয়ে এর জন্য আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তালিকা থেকে বোঝা যায়। শিবির সদস্যদের মধ্যে সংখ্যায় বেশি আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগে।
তালিকার ১৫১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য ১৪৩ সদস্যকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। তবে সদস্য ছাড়াও কর্মী-সমর্থক সাথী কয়জন আছেন এ হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় কালের কণ্ঠকে জানান, একটি তালিকা তাঁদের হাতে আছে। এ ব্যাপারে খোঁজখবর করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল বুধবার বারবার চেষ্টা করেও শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মুনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ কালের কণ্ঠকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে শিবিরের তৎপরতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। ছাত্রদল-ছাত্রলীগসহ সব ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতিতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ ছাড়া তিনি মনে করেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক পন্থায়। রগকাটা, চোখ উপড়ানো বা মেরে ম্যানহোলে ফেলে দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা কারো কাম্য নয়। তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ড যাতে কেউ চালাতে না পারে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ আছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন শক্তি সঞ্চয় করলেও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ পায়নি ছাত্রশিবির। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ ক্যাম্পাসে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে কয়েক মিনিটের জন্য মিছিল করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছিলেন তাঁরা। তবে অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন থেকেই নিজেদের পরিচয় গোপন করে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হলে অবস্থান করে আসছিলেন। এমনকি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের পরিচয়েও অনেকে হলে অবস্থান করেন। ক্যাম্পাস লাগোয়া কাঁটাবন মসজিদ ছাড়াও আশপাশের এলাকায় শিবিরের বড় কয়েকটি ঘাঁটি আছে।
শিবিরের সদস্য তালিকায় যারা আছেন
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ :
- কাজী মাহমুদুল হাসান, গ্রামের বাড়ি (লক্ষ্মীপুর),
- আব্দুল্লাহ আল মামুন (বরিশাল),
- আবুল কাশেম (চাঁদপুর),
- ওমর ফারুক-১ (চাঁদপুর),
- মামুন মিল্লাদ (ঝিনাইদহ),
- রুহুল আমিন (গোপালগঞ্জ),
- আমিনুর রহমান তুহিন (মাদারীপুর),
- কামাল উদ্দিন দুখু (কুমিল্লা),
- অনোয়ার হোসেন (কুমিল্লা),
- আবু সুফিয়ান,
- বিল্লাহ হোছাইন (ভোলা),
- জালাল উদ্দিন।
আরবি বিভাগ :
- শরিফুল্লাহ (কুমিল্লা),
- তাসলিম উদ্দিন (বরিশাল),
- রফিকুল ইসলাম (খুলনা),
- আলাউদ্দিন (নোয়াখালী),
- ফজলে বারী শাকিল (কুমিল্লা),
- আখতারুল আলম সোহেল (লক্ষ্মীপুর),
- সানোয়ার হোসেন (সিরাজগঞ্জ),
- কাজী ইকরামুল হক (কুমিল্লা),
- আহাস-ইল কবির বিপ্লব (যশোর),
- মহিউদ্দিন মাসুম (পিরোজপুর),
- ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (কক্সবাজার),
- শরীফ মাসুম (নোয়াখালী),
- তৈমুর হোসেন বিপুল (ঝিনাইদহ),
- শরীয়ত উল্লাহ (কুমিল্লা)।
ইসলামের ইতিহাস :
- আনিসুর রহমান (সভাপতি, ঢাবি) (কক্সবাজার),
- জালাল উদ্দিন (কুমিল্লা),
- শামসুজ্জামান (মেহেরপুর),
- মোতাছিমুল করিম (নেত্রকোনা),
- জাবেদ ইকবাল (কক্সবাজার),
- আসাদুজ্জামান (টাঙ্গাইল),
- রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী সুমন (সিলেট),
- হাবিবুর রহমান (যশোর),
- আবুল কালাম আজাদ (ঠাকুরগাঁও),
- আহাদ আলী,
- আবু বক্কর সিদ্দিক।
- হাবিবুল্লাহ মাহমুদ (টাঙ্গাইল),
- আজিজুল হক (লক্ষ্মীপুর),
- আনোয়ার হোসেন (টাঙ্গাইল),
- মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন (পটুয়াখালী),
- আব্দুল আলীম (টাঙ্গাইল),
- আব্দুল্লা হিল গনি (নাটোর),
- জহিরুল ইসলাম (গাজীপুর),
- মনোয়ার হোসেন (লক্ষ্মীপুর),
- মাহদি হাসান,
- আবদুল খালিক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান :
- হাবিবুর রহমান (ঝিনাইদহ),
- হুমায়ুন কবির তানিম (যশোর),
- কামরুজ্জামান (ঠাকুরগাঁও),
- মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ (বগুড়া),
- মোতালেব ইসলাম (সিরাজগঞ্জ),
- হারিছুল ইসলাম (সাতক্ষীরা),
- রাকিবুল ইসলাম (বগুড়া),
- মনিরুজ্জামান (লক্ষ্মীপুর),
- ওমর ফারুক-২ (গাজীপুর),
- জয়নুল ইসলাম (মৌলভীবাজার),
- রাকিবুল ইসলাম (খুলনা),
- আজহারুল ইসলাম।
সমাজবিজ্ঞান :
- মতিউর রহমান (পাবনা),
- আলমগীর কবির (চুয়াডাঙ্গা),
- আবু সালেহ নোমান (লক্ষ্মীপুর),
- শাহেদুল্লাহ (ঝিনাইদহ),
- বেলাল হোসাইন (নাটোর),
- রকিব উদ্দিন (নোয়াখালী),
- ইনসান আহম্মেদ,
- শাকিল,
- নাসির উদ্দিন (যশোর),
- জহুরুল ইসলাম (যশোর),
- আব্দুর রহমান মাসুম (গাজীপুর),
- ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।
- মাসুম বিল্লাহ,
- শফিউল্লাহ রেজোয়ান (বরিশাল),
- মোহাম্মদ হোসাইন (কক্সবাজার),
- মুহসীন ভুইয়া।
হিসাববিজ্ঞান :
- ওবায়দুল ইসলাম (বগুড়া),
- শামীম হোসেইন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া),
- মাহবুবুল ইসলাম মেনন (যশোর),
- ইসমাইল হোসেন (সিরাজগঞ্জ),
- সাইফুল ইসলাম শাওন (বরিশাল),
- এমরান আল মাহমুদ (যশোর)।
রসায়ন :
মাহফুজুল হাসান, মহব্বত আলী (ঝিনাইদহ), কাজী কাইয়ুম হোসেন (নড়াইল), মোস্তাফিজুর রহমান রানা (রংপুর)।
এ ছাড়াও আছেন দর্শন বিভাগের জামাল উদ্দিন (পাবনা), হাফেজ আহমাদুল্লাহ (নরসিংদী); শান্তি সংঘর্ষ বিভাগের মাহফুজুল হক ও নুরুল ইসলাম (সিলেট); আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মোস্তাফিজুর রহমান, আবু বক্কর রিয়াদ (নোয়াখালী), হাসানুজ্জামান (যশোর); গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আব্দুল গফুর ও ইকবাল মাহমুদ; অর্থনীতি বিভাগের বাসারাত হোছাইন (নোয়াখালী), জামাল উদ্দিন (চট্টগ্রাম); বিবিএর আমিনুল ইসলাম রাজা (মাগুরা), ইসহাক আলী (সাতক্ষীরা); ইতিহাসের মাহাবুবুল আলম (সাতক্ষীরা), প্রাণরসায়নের শফিউর রহমান (নাটোর), ব্যবস্থাপনার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (নোয়াখালী), মোশারফ হোসেন মুকুল (ঠাকুরগাঁও), কম্পিউটার বিজ্ঞানের শাহীনুর আলম (কিশোরগঞ্জ), মৃত্তিকা বিজ্ঞানের বাদশা ফয়সাল (চট্টগ্রাম), ইংরেজির সাদেকুল ইমলাম (ঠাকুরগাঁও), আল ফারুক (গাজীপুর), সাবি্বর আহমেদ; মার্কেটিংয়ের ফরহাদ মাসুম (জয়পুরহাট), সোহেল রানা (ফরিদপুর), মুশাহিদুল ইসলাম; ফারসি সাহিত্যের তাসিম বিল্লাহ মাসুদ, বাংলার নুরুন্নবী-২ (ফেনী), মৃত্তিকা বিজ্ঞানের মঞ্জুর মোর্শেদ দ্বীপু, উর্দু সাহিত্যের শেখ মইনুল করিম (ঝালকাঠি), লোকমান হোসাইন (পটুয়াখালী), ফলিত পরিসংখ্যানের রাশেদুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ), ভাষা বিজ্ঞানের কাইয়ুম খান (বরগুনা), আই-ই-আরের শাহাদত হোসেইন (গাজীপুর), নৃবিজ্ঞানের মিজানুর রহমান (পঞ্চগড়), মাহমুদুল হাসান, ফিন্যান্সের আবুল এহসান (ঝিনাইদহ), গণিতের মেহেদী হাসান (যশোর), ব্যাংকিংয়ের ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), এমআইএসের ইমামুল হক (ঝিনাইদহ), প্রাণবিদ্যার শেখ ফরিদ (কুড়িগ্রাম), ফলিত পদার্থের আতিউর রহমান (ঠাকুরগাঁও), তথ্য বিজ্ঞানের আল মামুন হাওলাদার (বাগেরহাট), পদার্থবিজ্ঞানের হাসান আল বান্না (ময়মনসিংহ), ফার্মেসির রবিউল ইসলাম (নাটোর), আনোয়ার হোসেন (ঢাকা), ইউনুস আলী, ফলিত রসায়নের আতিকুল ইসলাম, ভূতত্ত্বের নাসির উদ্দিন, মৎস্যবিজ্ঞানের মঞ্জুরুল ইসলাম।
বিভাগ ছাড়া নাম আছে সেলিম উদ্দিন (পাবনা), মমিনুল ইসলাম, এহসানুল হক জসীম, সাইদুর রহমান স্বপন, আশিকুর রহমান দেলোয়ার, সালমান মোঃ আব্দুল্লাহ, মামুন ওরফে সাগর ও কামরুলের।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন